• বদরুল ইসলাম বাদল

অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। কিন্তু দূর্নীতি ও দূর্বৃত্তায়নে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে উন্নয়ন নিয়ে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা । রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য অদক্ষ মানুষের পদায়ন অনেক জায়গায় উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরাজনীতির এই ছোঁয়া ভাইরাস কোভিডের মত তৃণমূল পর্যন্ত আক্রান্ত ।এমন পরিস্থিতিতে কউক ভবন নির্মাণ নিয়ে সততার বার্তায় স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সচেতন সমাজ।

অটোরিকশা চড়ে কউক নতুন ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখে মনে হল সমুদ্রের নীল জলের কিনারায় একটুকরো সচিবালয় মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। আধুনিকতায় আভিজাত্যপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ শৈলী নিয়ে ভবনটি সত্যি রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে। অটোচালক ভবনটি দেখিয়ে বলে, বিল্ডিংটির কাজের শেষে বাজেটের বাকি টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিস্ময়ের সাথে চালক বলতেই থাকে, বড় লোকের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার খবর তেমন শোনা যায় না। আমার মত গরীব রাস্তা ঘাটে জিনিস পেয়ে থাকলে ঠিকানা মতো ফেরত দেবার খবর অনেক দেখতে পাওয়া যায় । কউক চেয়ারম্যান লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমদের সততার এমন দৃষ্টান্তটি সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ধনী দরিদ্র কৃষক শ্রমিক জনতাসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে প্রসংশিত হয়। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদযাপন কালে প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর সেতু বাঙালী জাতির জন্য একটি বড় অর্জন। ।তেমনি ভাবে দেশের অবকাঠামো গত উন্নয়নের সাথে সত্ মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় বিকাশ নিয়ে কউক ভবন সততার একটি শিক্ষনীয় চেতনার মাইলফলক। ১০তলাবিশিষ্ট কউক ভবন নির্মাণের বরাদ্দ ছিল ১১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা । কাজ শেষ করে বেচে যাওয়া ৪ কোটি ৩০লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ কক্সবাজারের জন্য খবর টি চমকপ্রদ, এবং পুরো বাংলাদেশের মধ্যে বিরল নজির।

বেলাল নামক একজন বাঙালী ইতালিতে গিয়েছিল।তিনি ফুল ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইতালীয় একজন টেলিভিশন উপস্থাপক বিভিন্ন দেশের মানুষের ভিতরের রুপ জানতে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। উপস্থাপক একদিন ফাদারের ছদ্ম বেশে দানবাক্স নিয়ে গীর্জার সামনে দাড়িয়ে ছিল।জায়গাটিতে সিসিটিভি ক্যামেরা সেটআপ করে রাখেন তিনি । ঐ পথে কোন বিদেশিকে দেখলে তিনি বলেন, “ভাই আমার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছে । তুমি দানবাক্স টি কিছু সময় পাহারা দাও”।ফাদার সরে গিয়ে গোপন ক্যামরাতে দেখতে থাকেন, সব দেশের লোকেরা ফাদারের অনুপস্থিতিতে টাকা চুরি করছে।এভাবে বহু দেশের মানুষ নিয়ে এই খেলাটির শেষে দেখা গেল শুধুমাত্র বাঙালী বেলাল টাকা সরাচ্ছে না। দানবাক্সে টাকা দিতে আসা লোকগুলোও ছিল উপস্থাপকের সাজানো।বেলাল যখন টাকা নিচ্ছে না তখন তাঁকে লোভে ফেলতে আরও বেশি টাকা দানবাক্সে রাখতে লোক পাঠান ফাদার। তাঁর পরেও বেলাল টাকা সরায় নাই। নিউজ টি টেলিভিশনে দেখানো হয়। ইতালীয় একজন মহিলা বেলালের সততার দৃষ্টান্ত দেখে তাঁকে তার পারিবারিক ব্যবসায় নিয়োজিত করেন। উপস্থাপক বেলালকে প্রশ্ন করেছিলেন, “সকলে টাকা সরিয়েছে, আপনি কেন সরান নাই?” জবাবে বেলাল বলেন, “আমি আমার দায়িত্বকে সন্মান করি।” বিশ্লেষক মহলের মতে,সন্মান ও সততা শব্দ দুটি একই মুদ্রার দুই পিঠ।অর্থাৎ সন্মানিত হতে চাইলে অবশ্যই সত্ হতে হবে, অর্পিত দায়িত্ব নিষ্টার সাথে পালন করা চাই। ,সাথে সততার সঙ্গে চলা,কথা বলা। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে প্রত্যেককে সততা নিয়ে প্রতিজ্ঞাবাক্য পাঠ করানো হয়। কিন্তু বাক্যগুলো পালন নিয়ে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে একমাত্র দেশের জন্য ভালবাসা আর আপন সন্মান সমুন্নত রাখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে । বিজ্ঞজনের অভিমত, যোগ্য মানুষের মধ্যেই উন্নত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকপাত হয়ে থাকে।যা কউক চেয়ারম্যান করেই দেখিয়েছেন। তিনি স্হানীয় এক দৈনিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন,” আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওয়াদাবদ্ধ যে, সততা,নিষ্টা ও দুর্নীতিমুক্ত থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো।”বিশ্লেষক সমাজের মতে, দুর্নীতির উর্ধ্বে উঠে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করে দেখানো অনেক বড় সম্মানের। আর এই সম্মান অর্জনের প্রছন্ন শক্তি সততা এবং যোগ্যতা।সঠিক যোগ্য মানুষকে উপযুক্ত জায়গায় বসানো হলে তিনি তার সেরাটা দিতে পারেন”। বিশ্ব কবি রবিঠাকুরের মতে,” অযোগ্য ও দুর্বলের নেতৃত্ব অতি ভয়ংকর। এরা নিজেদের স্বার্থের বাইরে ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারে না”।

দর্শন শাস্ত্র মতে,”বস্তু যখন সামনে থাকে তখন ভাবের উদয় হয়”। শহীদ মিনারে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন , স্মৃতিসৌধ দেখার সাথে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়ে। স্মৃতি উন্মুক্ত হয়ে ভাসে স্বাধীনতা বিরোধী আলবদর রাজাকারদের চরম নিষ্ঠুরতম কার্যক্রম। বাঁশের কেল্লার দুর্গ বানিয়ে তিতুমীর বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিজের তেজোদ্দীপ্ত ভূমিকা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা জাগ্রত করে । তার ধারাবাহিকতায় নবাব সিরাজ উল্লাহ , মীর কাসেম জগৎ সেঠের মত অনেকের সাহসিকতার ঐতিহাসিকতা রূপায়িত হয়।যা শতশত বছর পরে ও দেশপ্রেমের উদাহরণ হয়ে ইতিহাসে আলো ছড়াচ্ছে। পদ্মা সেতু বাঙালির জাতির সক্ষমতার দৃষ্টান্ত, যাহা শত বছর পরে ও জাতি গর্বভরে স্মরণ করবে।তেমনই কউক ভবন শুধু একটি ইটপাথরে গাঁথা স্থাপনা নয়।দায়িত্ব এবং সততা মিশানো একটি সন্মানের অনন্য নিদর্শন।এই স্থাপনা আগামী প্রজন্মে সততার বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে। যোগ্যতা সততা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে নিজের সন্মান সমুন্নত রাখতে চাইলে আমরা ও পারি, যার উজ্জ্বল উদাহরণ কউক ভবন এবং তার চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ)ফোরকান আহমদ । যত দিন এই ভবন মাথা উঁচু করে থাকবে ততদিন সততার ঐতিহাসিক নজির হিসেবে আলো ছড়াবে।লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমেদ কক্সবাজার জেলার বৃহত্তর সামাজিক সংগঠন আমরা কক্সবাজারবাসীর প্রধান উপদেষ্টা।তিনি “আমরা কক্সবাজারবাসী” সহ জেলার আপামর জনসাধারণকে সাথে নিয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির মাধ্যমে এই শহরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সপ্নমতো সাজানো নিয়ে সবার সহযোগিতা চায়।

সততা কিংবা সন্মানের কথা যতই বলা হোক না কেন যোগ্য ব্যক্তিকে যথা স্থানে পদায়ন করা না হলে ভালফল আসে না।যোগ্য ব্যক্তি তার পুরো টিম যোগ্য মানুষ নিয়ে সাজিয়ে তাদের বিচক্ষণতা এবং কর্মদক্ষতাকে মুল্যায়ন করে।পক্ষান্তরে দেখা যায় যে, অযোগ্য ব্যক্তি তার সহচর হিসেবে বাচাই করে তারই মতো ব্যক্তিদের যেন তার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলার সাহস না থাকে। ফলে পুরো টিম অযোগ্যতার কারণে পরিশেষে শুন্য রানে হয় অল আউট। বিজ্ঞজনদের উপলব্ধি থেকে উঠে আসে যে, মানুষের কাছে সততা হচ্ছে মুল্যবান সম্পদ।অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সততার অধিকারী হয়ে ও যোগ্যতার অভাবে নিস্পৃহতার কারণে সফলকাম হয় না। আর এই অক্ষমতার ভার বহন করতে হচ্ছে রাষ্ট্র,সমাজ রাজনীতি সহ প্রতিটি ক্ষেত্র।

পর্যটন নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য নিয়ে কক্সবাজারের নতুন রুপ দৃশ্যমান। সাগর দেখতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ বৃদ্ধি কল্পে কক্সবাজার শহরের
লালদিঘী গোলদিঘি বাজার ঘাটার নাপিতা পুকুর পুনঃখনন সহ নতুন করে সংস্কার শেষ করে কউক।ঘুরতে আসা একজন কবি তিন পুকুরকে সাগররানীর অঙ্গে তিন তিলকী হিসেবে উল্লেখ করেন ।জেলা শহর হিসেবে কক্সবাজারের উন্নয়ন কোন সময়ই পরিকল্পিত ছিল না। সময়ের প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দারা যার যার মতো করে স্থাপনা তৈরি করে। ফলে নানাবিধ সমস্যার চাপে শহরবাসী ।এসব থেকে উত্তরণে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে এখন নিরলসভাবে কাজ করছে পৌরসভা, কউক সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। দিন যতই যাচ্ছে প্রতিদিনই কক্সবাজারের নতুন রুপ সামনে আসছে।কক্সবাজার নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “একটা মাষ্টারপ্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছি পুরো কক্সবাজারটাকে ঘিরে। এর উন্নয়নটা যেন অপরিকল্পিত ভাবে না হয়ে মাষ্টারপ্ল্যান অনুযায়ী হয়।”পর্যটক টানতে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক এবং সমুদ্রে রানওয়ে তৈরি নিয়ে দৃষ্টি নন্দন করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতু উল্লেখ করে তিনি বলেন, কক্সবাজারের বিমানবন্দরটি হবে আন্তর্জাতিক আকাশপথের রিফুয়েলিং সেন্টার”।নগরবাসিদের অভিমত চলমান মেগা প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার হয়ে উঠবে আধুনিক পর্যটন নগরী।কউক পৌরসভা সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা হলে ইতিবাচক চিন্তার মানুষের অভিমত, সল্প কালীন সময়ে দুর্ভোগ হতে মানুষ পরিত্রাণ পাবে।

এই শহর আমাদের সবার। ভবিষ্যত প্রজন্মের।উন্নয়ন নিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিপুত্রদের আন্তরিকতা
যথেষ্ট ভালো।আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন শেখ মতামতে বলেন,কউক চেয়ারম্যান মহোদয় যদি কক্সবাজারের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা পান তাহলে এই অঞ্চল বিশ্বের দরবারে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে মনে করি”। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি,যেন এ অঞ্চলকে আন্তরিকতা এবং সততার সঙ্গে সাজাতে পুনরায় ফোরকান আহমেদ মহোদয় কে কউক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিন”।আসুন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোতে সততা,দায়িত্বের প্রতি সন্মান রেখে নিজেদের শহর কে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলি।

লেখক :
কলামিস্ট,সাবেক ছাত্রনেতা,
সদস্য বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি।
সংগঠক “আমরা কক্সবাজারবাসী”